২১. দানধর্ম্মভীষ্ম বলিলেন শুন অপূর্ব্ব কথন।অপার মহিমা রাজা গোবিন্দ সেবন।।লিঙ্গরূপী জনার্দ্দন শিলা অবতার।শ্রদ্ধা করি পূজা যেই করয়ে তাঁহার।।শুভলগ্ন শুভতিথি শুভক্ষণ দিনে।মধুপর্কে স্নান যে করায় নারায়ণে।।সর্ব্ব পাপে মুক্ত হয় সেই মহাশয়।শতবংশ সহ যায় বিষ্ণুর আলয়।।নারিকেল জলেতে স্নাপয়ে পশুপতি।শ্রদ্ধা ভক্তি করিয়া বিবিধ করে স্তুতি।।শতবংশ সহ সেই নিষ্পাপ হইয়া।শিবের সদনে যায় বিমানে চড়িয়া।।দেবতা উদ্দেশে যেই পুষ্পোদ্যান করি।ভক্তি করি পূজা করে হর কিম্বা হরি।।অন্তঃকালে স্বর্গপুরে হয় তার গতি।ইহলোক পরলোকে না হয় দুর্গতি।।তুলসী আরাম যেই করিয়া রোপণ।ত্রিসন্ধ্যা স্তবন করে ত্রিসন্ধ্যা বন্দন।।তারে তুষ্ট হন প্রভু দেব জগৎপতি।সর্ব্বপাপে মুক্ত হয় সেই মহামতি।।বৈভব বিস্তর আসি করয়ে সংসারে।যার যে বৈভব হয় তেমন প্রকারে।।অল্প বা বিস্তর পুণ্য গণি যে সমান।তার কথা কহি রাজা শুন সাবধান।।তড়াগ পুষ্কর্ণি দেয় ধনাঢ্য পুরুষে।ব্রাহ্মণে করয়ে দান অশেষ বিশেষে।।চতুষ্পাদ পুণ্য পূর্ণ কোথায় গণন।দ্বিপাদেতে পুণ্য কোথা শুন হে রাজন।।দ্বিপাদেতে পূর্ণ পুণ্য মধ্যমেতে গণে।নিকৃষ্টে পাদৈক পূর্ণ বেদেতে বাখানে।।ইতিমধ্যে করে পুণ্য যত শক্তি যার।সমান গণি যে পুণ্য শ্রদ্ধা অনুসার।।ধেনু রত্ন তণ্ডুলাদি বস্ত্র আভরণ।অশ্রদ্ধায় করে যেই দ্রব্য নিবেদন।।অঙ্গহীন হয় পুণ্য, না হয় উহাতে।নিশ্চয় ধর্ম্মের পুত্র কহিনু তোমাতে।।দরিদ্র কিঞ্চিৎ যদি দেয় শ্রদ্ধান্বিতে।চতুষ্পাদ পুণ্য তার হয় যে নিশ্চিতে।।যেমন বৈভব তেন বিপ্রে দেয় দান।শ্রদ্ধা ভক্তি করিয়া পূজয়ে ভগবান।।নাহিক সংশয় ইথে বেদের বাখান।তড়াগ কূপেতে পুণ্য গণি যে সমান।।এক বীজ রোপণ করয়ে দুঃখীজন।সমান ইহার পুণ্য করি যে গণন।।কোটি কোটি ব্রাহ্মণে ভুঞ্জান ধনীগণ।দরিদ্র করায় এক বিপ্রকে ভোজন।।লক্ষ ধেনু বিপ্রে দান করে ধনীজন।দরিদ্রের এক গাভী হয় তার সম।।কোটি কোটি মনুষ্যে পালয়ে ধনীজন।ব্রাহ্মণ ক্ষন্ত্রিয় আদি আর শূদ্রগণ।।দরিদ্র পুরুষ এক মনুষ্য পালয়।সমান লভয়ে ফল বেদেতে বলয়।।ধনীতে পূজয়ে কৃষ্ণে দিয়া উপহার।ঘৃত দুগ্ধ রত্ন বস্ত্র তণ্ডুল অপার।।দরিদ্র পূজয়ে জল দিয়া নারায়ণ।শ্রদ্ধা ভক্তি স্তুতিবশে হয় তার সম।।ধনাঢ্য পুরুষ দেয় দিব্য দেবালয়।ইষ্টক পাষাণ হেমমণি রৌপ্যময়।।মুকুতার ঝারা স্তম্ভ প্রবাল পাথর।নানাবিধ দিব্য রত্ন অতি মনোহর।।শুভতিথি শুভক্ষণ করি নিরূপণ।শ্রদ্ধান্বিত গোবিন্দেরে করে সমর্পণ।।অন্নদান ভূমিদান ধেনুদান আদি।ব্রাহ্মণে ভুঞ্জায় কত না হয় অবধি।।মৃত্তিকার গৃহ এক করিয়া রচন।তাহাতে স্থাপয়ে হরি ধনহীন জন।।দুই এক ব্রাহ্মণে করয়ে অন্নদান।সমান লভয়ে পুণ্য বেদেতে বাখান।।সংক্ষেপে কহিনু দান ধর্ম্মের কথন।শোক দূর কর রাজা স্থির কর মন।।বিধির লিখন ফল ভুঞ্জয়ে সংসারে।যেন ধর্ম্ম তেন ফল বেদেতে বিচারে।।অধর্ম্মেতে কেহ ধর্ম্ম লভে কর্ম্মফলে।ধর্ম্ম হৈতে পাপ কেহ লভয়ে ভূতলে।।এত শুনি যুধিষ্ঠির সবিস্ময় মন।জিজ্ঞাসেন কহ দেব ইহার কারণ।।অধর্ম্মেতে কেবা ধর্ম্ম পাইল সংসারে।শুনিবারে ইচ্ছা বড় কহিবে আমারে।।মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।আমার কি শক্তি ইহা বর্ণিবারে পারি।।মস্তকে বন্দিয়া মাত্র বিপ্র পদরজ।কহে কাশীদাস গদাধর দাসাগ্রজ।।২২. প্রয়াগ মাহাত্ম্যে ব্যাধ ও সুমতির উপাখ্যান২২. প্রয়াগ মাহাত্ম্যে ব্যাধ ও সুমতির উপাখ্যানভীষ্ম বলিলেন শুন পাণ্ডুর নন্দন।পূর্ব্ব ইতিহাস কথা শুন দিয়া মন।।ধনপতি নামে বৈশ্য অযোধ্যায় ধাম।সর্ব্বধনে পূর্ণ বৈশ্য গুণে অনুপম।।সুমতি নামেতে তার ভার্য্যা গুণবতী।পরমা সুন্দরী সেই যেন কাম রতি।।সর্ব্বসুখে পূর্ণ বৈশ্য মহাধনবান।পুত্রহীন কেবল দুঃখিত মতিমান।।নানমতে নানাযজ্ঞ করয়ে বিস্তর।ভার্য্যা সহ ব্রত আচরিল বৈশ্যবর।।অদৃষ্টের বশে তার না হৈল নন্দন।এই হেতু সদা বৈশ্য রহে দুঃখী মন।।পুত্রহীন বৃথা জন্ম সংসার ভিতরে।পুত্র বিনা নাহি পার নরক দুস্তরে।।এইরূপে বৈশ্য বহু করিল চিন্তন।দূরদেশে গেল চলি বাণিজ্য কারণ।।একদিন বৈশ্যপত্নী দাসীগণ সঙ্গে।সরোবরে স্নান হেতু চলিলেন রঙ্গে।।উপবন মধ্যে আছে রাম সরোবর।স্নানে পুণ্যফল তাহে লভয়ে বিস্তর।।সেই সরোবরে গেল স্নান করিবারে।হেনকালে এক ব্যাধ আসে তথাকারে।।লুব্ধক তাহার নাম বিখ্যাত ভুবন।দেখিয়া কন্যার রূপ হয় অচেতন।।পীতবর্ণ অতি রঙ্গ জিনিয়া কাঞ্চন।রক্তমাংস রবিত্রাস দেখিয়া পিন্ধন।।কুচযুগ জিনি পূগ কিবা রসায়ন।করিকর ভুজবর মধ্য পঞ্চানন।।মুখজ্যোতি দেখি শশী নিন্দে আপনারে।দেখিয়া মূর্চ্ছিত ব্যাধ হইল অন্তরে।।ক্ষণেকে চৈতন্য পেয়ে বলয়ে বচন।শুন আজ সুবদনী মম নিবেদন।।তোমা সম রূপবতী নাহি ত্রিভুবনে।এ রূপ যৌবন ব্যর্থ কর কি কারণে।।দূরদেশে গেল পতি বাণিজ্য কারণে।রতিসুখহীনা হয়ে বঞ্চহ কেমনে।।তোমাতে মজিয়া মন কম্পিত আমার।স্মরশরে মম অঙ্গ হৈল ছারখার।।দয়া করি রামা মোরে করাও রমণ।নহে এইক্ষণে আমি ত্যজিব জীবন।।নরহত্য মহাপাপ জানহ আপনি।এত শুনি ক্রোধচিত্তে বলে নিতন্বিনী।।অধর্ম্মী পাপিষ্ঠ তুই অতি হীন জাতি।কোন লাজে হেন বোল বলিলে দুর্ম্মতি।।স্পর্শ করি তোরে হয় স্নান করিবারে।সজ্জা নাই তেঁই হেন বলহ আমারে।।ভৃত্যের সমান মোর নহ দুরাচার।এইমত অনেক করিল তিরস্কার।।শুনিয়া হইল ব্যাধ দুঃখিত অন্তর।স্নান করি বৈশ্যপত্নী গেল নিজ ঘর।।মনে মনে ব্যাধ তবে অনেক ভাবিয়া।দিবেদিল দাসীগণে বিনয় করিয়া।।কিরূপে এ কন্যা লাভ হইবে আমার।বিচার করিয়া তোরা কহ সারোদ্ধার।।এত শুনি উপহাস করি দাসীগণ।কোন্ লাজে হেন কথা কহরে দুর্জ্জন।।বামন হইয়া চাহ চন্দ্রমা ধরিতে।পতঙ্গ হইয়া চাহ অগ্নি নিবারিতে।।চণ্ডাল হইয়া চাহ ধরিতে ব্রাহ্মণী।লজ্জা নাই তেঁই বল হেন দুষ্টবাণী।।পুনরপি বলে ব্যাধ বিনয় করিয়া।কহ সত্য কিরূপে পাইব এই জায়া।।ইহজন্মে পাই কিন্বা পাই জন্মান্তরে।নির্ণয় করিয়া সত্য কহিবা আমারে।।মালিনী নামেতে দাসী কহে হাসি হাসি।প্রয়াগে করহ তপ হইয়া তপস্বী।।ত্রিসন্ধ্যা করহ স্নান প্রয়াগের নীরে।এক ক্রমে তিনদিন রহ গঙ্গাতীরে।।তথা বাস করিয়া স্মরিয়া নারয়াণ।তিন দিন তিন রাত্র করিলে লঙ্ঘন।।তবে সে এ কন্যা তুমি পাইবে নিশ্চয়।এত বলি দাসীগণ গেল নিজালয়।।শুনিয়া আনন্দে ব্যাধ চলিল ত্বরিত।প্রয়াগের তীরে গিয়া হৈল উপনীত।।একাসন করিয়া তিন দিবস রজনী।একচিত্তে স্মরণ করয়ে চক্রপাণি।।ভকতকবৎসল হরি বৈকুণ্ঠে থাকিয়া।ব্যাধে ডাকি বলিলেন শূণ্যরূপ হৈয়া।।মনোবাঞ্ছা পূর্ণ ব্যাধ হইবে তোমার।এইত প্রয়াগে স্নান কর পুনর্ব্বর।।এতেক শুনিয়া ব্যাধ আনন্দিত মন।প্রয়াগে করিয়া স্নান করিয়া তর্পণ।।পাপতনু খণ্ডিল হইল দিব্যগতি।রূপে গুণে হৈল সেই বৈশ্যের আকৃতি।।শীঘ্রগতি অযোধ্যায় করিল গমন।উপনীত হন গিয়া বৈশ্যের ভবন।।নিজপতি প্রায় ব্যাধে বৈশ্যপত্নী দেখি।নিরখিয়া প্রণমিল আসি শশীমুখী।।পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া বসাইল সিংহাসনে।ঈষৎ হাসিয়া কহে মধুর বচনে।।যত দিন প্রাণনাথ নাহি ছিলা ঘরে।তত দিন অসন্তোষ আমার অন্তরে।।সুখলেশ নাহি চিত্তে আমি বিরহিনী।চন্দ্রের অভাবে যেন ম্লান কুমুদিনী।।ব্যাধ বলে বড় ভাগ্য তোমার আছিল।তেঁই সে সঙ্কটে মম প্রাণ রক্ষা হৈল।।বহুদূর গিয়াছিনু বাণিজ্য কারণ।ধন জন সব বিধি করিল হরণ।।রাক্ষসের হাতে আমি পড়িয়াছিলাম।সকল মজিল দৈবে প্রাণ পাইলাম।।শুনি কহে বৈশ্যপত্নী সজল নয়ন।ধন যাক্ প্রাণনাথ আইলে ভবন।।এইরূপে আছে দোঁহে কথোপকথনে।হেনকালে আসে বৈশ্য আপন ভবনে।।শত শত বলদে শকটে পূরি ধন।নিজ গৃহে আসি উত্তরিল সেইক্ষণ।।দেখিয়া বিস্ময়চিত্ত হইল সুমতি।এইরূপ দুইজন একই আকৃতি।।তুল্য ভাষা তুল্য গুণ তুল্য দুই জন।দুইজন দোঁহারে করিল নিরীক্ষণ।।দেখিয়া বিস্ময় মন বৈশ্যের নন্দন।কার সঙ্গে ভার্ষ্যা মম করিছে কথন।।পতিব্রতা ভার্য্যা মম অন্য নাহি জানে।কোন্ দেব আসিয়াছে ছল আচরণে।।এতেক ভাবিয়া বৈশ্য জিজ্ঞাসে পত্নীরে।হইলাম বিস্মিত তোমার ব্যবহারে।।পতিব্রতা বলি তোমা জানে জগজ্জন।পর পুরুষের সঙ্গে কর আলাপন।।শুনিয়া সে বৈশ্যপত্নী কহিতে লাগিল।তব রূপে এইরূপ বিধি নিরমিল।।আকৃতি প্রকৃতি রূপ তুল্য দোঁহাকার।কেমনে জানিব চিত্তে কে স্বামী আমার।।এক গর্ভে জন্ম হেন হয়েছে দোঁহার।ভেদজ্ঞান নাহি যেন অশ্বিনীকুমার।।দেখিয়া সুমতি তবে ভাবে মনে মনে।দুই স্বামী এক রূপ দেখি কি কারণে।।পাপ বস্তু বলি হেন মনে নাহি জানি।বুঝি করিলেন মোরে মায়া চক্রপাণি।।এতেক ভাবিয়া দেবী বিস্ময় অন্তরে।কৃতাঞ্জলি করি স্তুতি করে দামোদরে।।জয় জয় জগৎপতি জয় নারায়ণ।নমস্তে মাধব নমো নমো জনার্দ্দন।।নমস্তে বরাহরূপ নমস্তে বামন।বলির মত্ততা হেতু পৃথিবী ধারণ।।নমস্তে মোহিনীরূপ অসুরমোহন।নমো নারায়ণ মধুকৈটভমর্দ্দন।।নমো ধন্বন্তরীরূপ দেবতার হিতে।জগৎ উদ্ধার নাথ জগতের প্রীতে।।সত্ব রজঃ তমোরূপ জয় জগৎপতি।নমো নরসিংহরূপ ভক্তজন গতি।।নমঃ ক্ষত্রকুলান্তক নমো ভৃগুপতি।নমো রামকৃষ্ণরূপ নমো জগৎপতি।।অখিলধারণ রূপ অখিলকারণ।অন্তরীক্ষ নাভি তব, পাতাল চরণ।।আকাশ মস্তক তব, তপন নয়ন।বিরাট রূপেতে ব্যাপিয়াছ ত্রিভুবন।।চরাচর দেব নাগ তোমার বিভূতি।কি বর্ণিতে পারি দেব আমি নারীজাতি।।অবলা স্ত্রীজাতি হেন বলে জ্ঞানীজন।তোমার মহিমা কিবা করিব বর্ণন।।তব মায়াবশে সমাচ্ছন্ন জগজ্জন।কৃপা করি দেব মোর ঘুচাও বন্ধন।।তব পাদপদ্ম বিনা না জানি মুরারী।যদি আমি হই সতী পতিব্রতা নারী।।দাসী বলি কৃপা যদি কর নারায়ণ।এ মহা লজ্জাতে মোরে করহ তারণ।।ভীষ্ম বলিলেন শুন শ্রীধর্ম্ম রাজন্ ।এইমত বৈশ্যপত্নী করিল স্তবন।।বৈকুণ্ঠের পতি তবে বৈকুণ্ঠ হইতে।বৈশ্যপত্নী নিকটে আইলেন ত্বরিতে।।ত্রিভঙ্গ ললিত রূপ শ্যাম কলেবর।কনক কিরীট দিব্য মস্তক উপর।।পীতবাস পরিধান রাজীবলোচন।শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম শ্রীবৎসলাঞ্ছন।।তুলসী কোমলদল বিচিত্র ভূষণ।মকর কুণ্ডল আদি বলয় কঙ্কণ।।চারু চতুর্ভূজরূপ মোহন মুরতি।ধন্য ধন্য মহাপ্রভু ধন্য জগৎপতি।।অঙ্গের দুকূল ভাসে আনন্দ অশ্রুতে।দবণ্ডৎ হইয়া কন্যা পড়িল ভূমেতে।।হাতে ধরি শীঘ্রগতি তুলিলেন তারে।দামোদর দিব্যজ্ঞান দিলেন দোঁহারে।।দিব্যজ্ঞানে দিব্য মূর্ত্তি হৈল তিনজন।বৈশ্যপত্নী বৈশ্য আর ব্যাধের নন্দন।।তিনজন নানা স্তুতি করে নারায়ণে।করযোড়ে সুমতি রহিল সেইক্ষণে।।অবধান কর দেব মম নিবেদন।দুই স্বামী একরূপ দেখি কি কারণ।।মায়ার নিদান তুমি বিখ্যাত ভুবনে।মায়া করি ভাণ্ড তুমি নিজ ভক্তগণে।।কার শক্তি তব মায়া করিবে বর্ণন।কিবা মায়াচ্ছন্ন মোরে করিলে এখন।।দুই স্বামী একরূপ চিন্তা বড় মনে।আজ্ঞা কর মহাপ্রভু চিনিব কেমনে।।কৃপা করি শ্রীচরণে পড়ি জগৎপতি।যেই স্বামী সেই হৌক এই সে মিনতি।।দ্বিচারিণী বলিবেক যত সর্ব্বজন।এই কর প্রভু মোর হউক মরণ।।না করিবা যদি শুনন আমার বচন।তোমার উপরে হত্যা দবি এইক্ষণ।।এত শুনি হাসিয়া বলেন নারায়ণ।দৈবের নির্ব্বন্ধ কন্যা না হয় খণ্ডন।।দুই স্বামী এই তব অদৃষ্টে লিখিত।আমার শকতি ইহা না হয় খণ্ডিত।।এত শুনি বৈশ্যপত্নী করে নিবেদন।যদি মোরে আজ্ঞা প্রভু হইল এমন।।কৃপা যদি কৈলা প্রভু আমা তিন জনে।সশরীরে লহ প্রভু বৈকুণ্ঠ ভুবনে।।মরর্ত্ত্যেতে থাকিলে হবে লোকে উপহাস।হাসিয়া গোবিন্দ তারে করেন আশ্বাস।।ভকতবৎসল হরি ঠেকিলেন দায়।বৈকুণ্ঠ হইতে রথ আনেন ত্বরায়।।এক রথে আরোহি চলেন চারিজন।শূশ্যে ভর করি রথ চলে সেইক্ষণ।।হেনকালে দুইজন হরির কিঙ্কর।চতুর্ভুজ রূপ দোঁহে শ্যাম কলেবর।।মোহন মূরতি রূপ রাজীবলোচন।চলি যায় বিমান আরূঢ় দুই জন।।সেই রথে আর দুই স্ত্রীপুরুষ জন।চারিজন এক রথে হরষিত মন।।দেখিয়া সুমতি অতি কৌতুহল মনে।করযোড়ে নিবেদন করে জনার্দ্দনে।।কহ দেব কেবা হয় এই দুই জন।তোমার সদৃশ রূপ দেখি কি কারণ।।আর দুই জন দোঁহাকার বাম পাশে।এক রথে চারিজন কৌতুক বিশেষে।।কৃষ্ণ কন জিজ্ঞাসহ উহা সবাকারে।আপনার পরিচয় কহিবে তোমারে।।এত শুনি সুমতি জিজ্ঞাসে সেইক্ষণ।কহ শুনি তোমরা কে হও দুই জন।।বামপাশে কেবা আর দেখি দুই জন।বিবরিয়া কহ শুনি ইহার কারণ।।এত শুনি হাসি দোঁহে বলয়ে বচন।হরির কিঙ্কর মোরা হই দুই জন।।এই দুই জন কেবা জিজ্ঞাসহ মোরে।দোঁহাকার কথা যে কহিব তোমারে।।এইত পুরুষ নামে কলিক আছিল।ক্ষন্ত্রকুলে জন্মি বড় কুক্রিয়া করিল।।এই যে রমণী বড় আছিল পাপিনী।নামেতে কলিঙ্গ বেশ্যা বড় দ্বিচারিণী।।কিন্তু অজ্ঞানেতে এক করিল সাধন।শুকপক্ষী এক এই করিল পালন।।শুকমুখে হরিনাম করিল শ্রবণ।অসংখ্য পুরুষ সহ করিল রমন।।সুমালী গন্ধর্ব্ব ছিল অতি ভয়ঙ্কর।তার সনে রমণ করিল বহুতর।।একদিন বেশ হেতু পুষ্প তুলিবারে।একাকিনী গেল এক কানন ভিতরে।।মৃগয়া কারণেতে কলিক দুষ্টতর।রথে চড়ি গিয়াছিল বনের ভিতর।।বেশ্যার রূপেতে মগ্ন হইল দুর্ম্মতি।হরিয়া রথেতে লৈয়া চলিল ঝটিতি।।শীঘ্র রথ চালাইয়া দিল দুরাচার।গন্ধর্ব্ব আসিয়া তথা নামিল সত্বর।।ক্রোধেতে কলিক তবে কৈল মহামার।প্রাণপণে বাণ বিন্ধে দোঁহে দোঁহাকার।।দোহে দোঁহা বাণ বিন্ধে কেহ নহে উন।ক্রোধেতে গন্ধর্ব্ব বাণ মারিল দ্বিগুণ।।বায়ু অস্ত্র গন্ধর্ব্ব এড়িল ক্রোধভরে।ফাঁপর কলিক নিবারিতে নাহি পারে।।মহা বায়ুবেগে রথ উড়ায় সত্বরে।প্রয়াগের জলে ফেলাইল দুরাচারে।।প্রয়াগে ডুবিয়া মরে এই দুই জন।জন্ম জন্মান্তর পাপ হইল মোচন।।বৈকুণ্ঠে লইয়া যাই এই সে কারণ।এত শুনি হৈল কন্যা সবিস্ময় মন।।দাসীগণ যে বলিল হইল নিশ্চয়।জানিলাম আমি এই ব্যাধের তনয়।।প্রয়াগে কামনা করি ডুবিয়া মরিল।মম পতি সম রূপ সে জন হইল।।দুই পতি হৈল মম দৈব নির্ব্বন্ধন।প্রয়াগ মহিমা কিছু না যায় কথন।।এইরূপে মনে মনে করিল চিন্তন।বৈকুণ্ঠের দ্বারী হয়ে রহে তিন জন।।মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে পরলোকে তরি।।মস্তকে বন্দিয়া চন্দ্রচূড় পদরজ।কহে কাশীদাস গদাধর দাসাগ্রজ।।২৩. পরশুরামের তীর্থপর্য্যটনভীষ্ম বলিলেন শুন ধর্ম্মের নন্দন।আর কিছু ইতিহাস শুন দিয়া মন।।কৌণ্ডিন্য নামেতে মুনি বিখ্যাত ভুবন।তীর্থযাত্রা করি তিনি করেন ভ্রমণ।।ভাগীরথী বারাণসী প্রভাস পুষ্কর।বিন্দুক্ষেত্রে বিন্দুহ্রদ বিরজা দুষ্কর।।ইন্দ্রদ্যুন্ন সরোবর সরযূ কেদার।মান সরোবর আদি তীর্থ হরিদ্রার।।একে একে সব তীর্থ করিয়া ভ্রমণ।ব্রহ্মহ্রদক্ষেত্রে তবে করিল গমন।।বিপুল বিস্তার হ্রদ দেখিতে সুন্দর।বৃহৎ কুম্ভীর থাকে তাহার ভিতর।।পূর্ব্বেতে পরশুরাম ভৃগুবংশপতি।টাঙ্গিতে হ্রদের দ্বার কাটেন ঝাটিতি।।খণ্ডিত হইয়া জল হইল বাহির।হরিদ্বার দিয়া বহে মাহস্রোত নীর।।দ্বার মুক্ত করি স্নান করে তপোধন।মাতৃবধপাপে রাম হইল মোচন।।এত শুনি জিজ্ঞাসেন ধর্ম্মের নন্দন।কহ শুনি পিতামহ সবিস্ময় মন।।মহাধর্ম্মশীল রাজা ভৃগুবংশমণি।কি কারণে মাতৃবধ করিলেন শুনি।।সর্ব্ব গুরু হৈতে শ্রেষ্ঠ গণি যে জননী।হেন কর্ম্ম কি কারণে করিলেন মুনি।।ভীষ্ম বলিলেন তাহা শুনহ রাজন।ভুবনে বিখ্যাত জমদগ্নি তপোধন।।রেণুকা নামেতে তাঁর ভার্য্যা গুণবতী।পুত্র বাঞ্ছা করি স্বামী সেবা করে অতি।।ক্রমে ক্রমে পঞ্চ তার জন্মিল নন্দন।কনিষ্ঠ তাহার রাম প্রতাপে তপন।।ধনুর্ব্বেদ শিখিলেন বশিষ্ঠের স্থানে।রামের সমান বীর নাহি ত্রিভুবনে।।একদিন জমদগ্নি ছলিতে কুমারে।গৃহিণীকে জল আনি দেহত আমারে।।শীঘ্রগতি জল আনি দেহত আমারে।তর্পণ করিব আমি জানাই তোমারে।।এত শুনি কলসী আনিয়া শীঘ্রতর।জল আনিবারে যায় সিন্ধু সরোবর।।হেনকালে চলি যায় ঘৃতাচী অপ্সরী।তার রূপে মুগ্ধ হয় গাধির কুমারী।।মুহূর্ত্তেকে তার রূপ করে নিরীক্ষণ।যতক্ষণ তার প্রতি চলিল নয়ন।।সে কারণে বিলম্ব হইল কতক্ষণ।জললয়ে দ্রুত গতি করিল গমন।।বিলম্ব দেখিয়া মুনি ক্রোধিত হইল।জ্যেষ্ঠ পুত্রে চাহি দ্রুত ডাকিয়া কহিল।।জননীর মাথা কাটি আনহ ত্বরিত।এত শুনি জ্যেষ্ঠপুত্র হইল ভাবিত।।মাতৃবধ-পাপ চিন্তি না শুনিল বাণী।আর তিন পুত্রেরে বলিল মহামুনি।।কেহ না শুনিল বাক্য ক্রোধে মুনিবর।কনিষ্ঠ নন্দন রামে বলিল সত্বর।।জননী সহিত কাটি চারি সহোদর।আমার আজ্ঞায় তাত ফেলাও সত্বর।।এতেক শুনিয়া রাম বিলম্ব না করি।মাতৃ সহ কাটিলেন সহোদর চারি।।দেখিয়া পুত্রের কর্ম্ম সবিস্ময় মন।তুষ্ট হৈয়া জমদগ্নি বলেন বচন।।চিরজীবী তাত তুমি হও মম বরে।তোমা সম বীর কেহ নহিবে সংসারে।।আর যেই বর ইচ্ছা মাগ মম স্থানে।শুনিয়া কহেন রাম পিতার চরণে।।যদ্যপি আমায় পিতা তুমি দিবা বর।জীউক আমার মাতা চারি সহোদর।।এত শুনি সৌম্যদৃষ্টে চাহি তপোধন।ভার্য্যা সহ জীয়াইল চারিটি নন্দন।।মাতৃবধ সঞ্চারিল রামের শরীরে।না খসে হাতের টাঙ্গি পড়িল ফাঁপরে।।কহ তাত কি হইবে ইতার প্রকার।হাত হৈতে টাঙ্গি কেন না খসে আমার।।এত শুনি ধ্যান করি মহা তপোধন।ক্ষণেক চিন্তিয়া বলে শুনহ নন্দন।।মাতৃবধ পাপ তাত দুষ্কর সংসারে।দৈবযোগে সঞ্চারিল তোমার শরীরে।।নিরাহারী ব্রতী হয়ে এক সন্বৎসর।মান অহঙ্কার ত্যজি শিরে জটাভার।।সংসারের যত তীর্থ করহ ভ্রমণ।তবেত তোমার পাপ হইবে মোচন।।পৃথিবীর যত তীর্থ করিয়া ভ্রমণ।তবেত যাইবে তাত কৌশল ভূবন।।বিষ্ণুযশা নামে দ্বিজ জগতে বিদিত।তাহার বাটীতে গিয়া হবে উপনীত।।জিজ্ঞাসা করিবে তারে ইহার প্রকার।তবেত হস্তের টাঙ্গি খসিবে তোমার।।শুনিয়া বিলম্ব আর কিছু না করিল।তীর্থ পর্য্যটন হেতু সত্বরে চলিল।।গয়া গঙ্গা বারাণসী করিয়া ভ্রমণ।তদন্তরে প্রভাসেতে করিল গমন।।তদন্তরে মানসরে করিল গমন।বিন্দুক্ষেত্রে বিন্দুসর করিল ভ্রমন।।উভয় পথেতে যত যত তীর্থ ছিল।একে একে ভৃগুরাম সকল ভ্রমিল।।পশ্চিম দ্বারকা আদি যত তীর্থগণ।প্রদক্ষিণ দ্বারকা আদি যত তীর্থগণ।।প্রদক্ষিণ করি সব করেন ভ্রমণ।দক্ষিণ দিকেতে মাসি হৈল উপনীত।।যত তীর্থ দক্ষিণেতে না হয় বর্ণিত।ইন্দ্রদ্যুন্ন সরোবর সরযু কেদার।গোদাবরী বৈতরণী রেবা নদী আর।।একে একে সর্ব্ব তীর্থ করিল ভ্রমণ।জনকের বাক্য তবে হইল স্মরণ।।সত্বরে চলিয়া গেল কৌশল নগরে।উপনীত হৈল গিয়া বিষ্ণুযশা ঘরে।।ভয়ঙ্কর মূর্ত্তি রামে দেখি দ্বিজবর।জিজ্ঞাসা করেন আসি রামের গোচর।।বিশীর্ণ শরীর কেন মলিন বদন।মেঘেতে আচ্ছন্ন যেন রবির কিরণ।।এত শুনি রাম করিলেন নিবেদন।যেই মত জননীরে করিল নিধন।।যেই মতে স্বহস্তে কাটিল ভ্রাতৃগণ।পুনশ্চ পাইল তারা যেমতে জীবন।।একে একে সকল করিল নিবেদন।শুনিয়া হইল দ্বিজ সবিন্ময় মন।।হৃদয়ে ভাবিয়া তবে বলিল বচন।খসিবে হস্তের টাঙ্গি শুন দিয়া মন।।ব্রহ্মহ্রদে গিয়া স্নান করহ ত্বরিত।তবেত হস্তের টাঙ্গি হইবে স্খলিত।।সেই সে হ্রদের কথা শুন দিয়া মন।ব্রহ্মার সৃজন সেই অদ্ভূত গঠন।।চক্রাকারে ঘুরে জল ঘূর্ণমান বায়।সেই হ্রদে যেই স্নান করিবারে যায়।।দৃষ্টিমাত্র জল তার উঠে উথলিয়া।ডুবায়ে মারিতে বারি যায় খেদাড়িয়া।।পুণ্য আত্মা হয় যদি পায় সে জীবন।সে কারণে তথায় না যায় কোন জন।।পূর্ব্বের বৃত্তান্ত আছে ব্রহ্মার নিয়ম।নারদের মুখে শুনি বাড়িল সম্ভ্রম।।ব্রহ্মঋষি সুতপা নামেতে তপোধন।ব্রহ্মলোকে গিয়া ঋষি দিল দরশন।।বসিয়াছে প্রজাপতি সভার ভিতর।মেনকা অপ্সরী যায় শূন্যে করি ভর।।পরমা সুন্দরী কন্যা মোহে ত্রিভুবন।দেখি হেঁটমুখ কৈল প্রজাপতিগণ।।সেইকালে সুতপা কামেতে মত্ত হৈয়া।কন্যার বদন কুচ চাহে নেহারিয়া।।দেখিয়া সক্রোধ চিত্ত হৈয়া পদ্মসন।সুতপারে কহিলেন সক্রোধ বচন।।মম লোকে আসিয়া করহ অনাচার।এই পাপে কুম্ভীরত্ব হইবে তোমার।।এইক্ষণে মম হ্রদে হইবে পতন।কতদিন পরে তব হইবে মোচন।।ভৃগুপতি যাবে মাতৃবধ খণ্ডিবারে।তাবৎ থাকিয়া সেই হ্রদের ভিতরে।।টাঙ্গির প্রহারে হ্রদদ্বার করি চির।তথা স্নান যখন করিবে ভৃগুবীর।।সেইক্ষণে গ্রাহরূপ ত্যজি শীঘ্রপতি।তদন্তরে জীব অংশে হইবে উৎপত্তি।।যুগল নয়ন অন্ধ হবে কর্ম্মদোষে।শৃঙ্গারেতে রত হবে পশুর সদৃশে।।এতেক বলিতে শীঘ্র হইল পতন।গ্রাহরূপে সেই তীর্থে আছে তপোধন।।শীঘ্রগতি তথাকারে করহ গমন।তবে সে তোমার পাপ হইবে মোচন।।এত শুনি ভৃগুরাম চলিল ত্বরিত।ব্রহ্মহ্রদ-কূলেতে হইলা উপনীত।।দেখি ভৃগুবরে জল উথলি চলিল।পর্ব্বত প্রমাণ নীর খেদিয়া আসিল।।শোষক মন্ত্রেতে নিবারিল ঘোর পানী।হ্রদদ্বার মুক্ত কৈল টাঙ্গিঘাত হানি।।হ্রদে স্নান করি তবে করিল তর্পণ।খসিল হাতের টাঙ্গি আনন্দিত মন।।হেনকালে কুম্ভীর দুরন্ত ভয়ঙ্কর।রামের চরণে আসি ধরিল সত্বর।।ধরিয়া কুম্ভীর কূলে তোলে ভৃগুমণি।শাপে মুক্ত হয়ে গ্রাহ ছাড়িল পরাণী।।মৃতদেহ দেখি রাম সবিস্ময় মন।নিজ গৃহে গেল তীর্থ করিয়া ভ্রমণ।।মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে পরলোকে তরি।।মস্তকে বন্দিয়া ব্রাহ্মণের পদরজ।কহে কাশীদাস গদাধর দাসাগ্রজ।।২৪. গয়াক্ষেত্রের উপাখ্যানরাজা বলে কহ শুনি গঙ্গার নন্দন।কি করিল পরেতে কৌণ্ডিন্য তপোধন।।ভীষ্ম বলিলেন গয়া গেল মুনিবর।মহাপুণ্যক্ষেত্র সেই বাখানে অমর।।গয়াসুর নামে ছিল দুরন্ত অসুর।তাহার সৃজিত ক্ষেত্র খ্যাত তিনপুর।।এত শুনি জিজ্ঞাসেন ধর্ম্মের নন্দন।কহ শুনি পিতামহ ইহার কারণ।।পশ্চাৎ শুনিব কৌণ্ডিন্যের উপাখ্যান।আগে কহ শুনি দেব ইহার আখ্যান।।অসুর সৃজিত ক্ষেত্র পূজ্য কি কারণ।ভীষ্ম বলিলেন শুন ধর্ম্মের নন্দন।।তমোগুণে জন্ম হৈল অসুর কুমার।ত্রিপুর নামেতে দৈত্য বিখ্যাত সংসার।।দেবদ্বিজে হিংসা দুষ্ট করে নিরন্তর।তার ভয়ে পলাইল যতেক অমর।।শিবের নিকটে গিয়া করিলেন স্তুতি।প্রকারেতে ত্রিপুরে মারেন পশুপতি।।ত্রিপুরে মারিয়া নাম হৈল ত্রিপুরারী।ত্রিপুরের ভার্য্যা শুকদৈত্যের কুমারী।।সতী গুণবতী কণ্যা রূপে অনুপম।ত্রিপুরের প্রিয় ভার্য্যা প্রভাবতী নাম।।গর্ভবতী সেইকালে আছিল সুন্দরী।নারদ কহিল আসি দৈত্য বরাবরি।।এই তব ভার্য্যা গর্ভে আছে তব সুত।তার কর্ম্ম ভবিষ্যতে হইবে অদ্ভূত।।শীঘ্রগতি রাখ লয়ে জনকের ঘরে।তবে শিব সহ তুমি প্রবেশ সমরে।।এত বলি অন্তর্দ্বান হন তপোধন।পিতৃগৃহে কন্যারে রাখিল সেইক্ষণ।।তবেত শিবের সঙ্গে যুদ্ধ আরম্ভিল।শিবের বাণেতে দৈত্য পরাণ ত্যাজিল।।পিতৃগৃহেতে কন্যা প্রসবিল যে নন্দন।গয়াসুর নাম হল বিখ্যাত ভুবন।।সর্ব্বশাস্ত্রবিশারদ হয় মহাবীর।তাহার সমরে দেবগণ নহে স্থির।।এক দিন গয়াসুর কোন কর্ম্ম কৈল।বিরলে বসিয়া জননীরে জিজ্ঞাসিল।।শুনগো জননী মোর এক নিবেদন।বিবরিয়া কহ মোরে ইহার কথন।।যখন পড়িতে আমি যাই শুক্রস্থানে।পিতৃহীন বলি মোরে বলে সর্ব্বজনে।।কহত জননী শুনি পূর্ব্বের কথন।কোন্ বংশে জন্ম মম কাহার নন্দন।।পিতৃহীন সুতের অসুখী সদা মন।জলহীন নদী যেন নহে সুশোভন।।চন্দ্রহীন রাত্রি যেন পদ্মহীন সর।পিতৃহীন সন্তানের তেমতি অন্তর।।এত শনি কহে মাতা রোদন করিয়া।পিতৃহীন বাপু তুমি বড় অভাগিয়া।।ধন্দ অসুরের বংশ ত্রিপুর নামেতে।তোমার জনক সেই বিখ্যাত জগতে।।আমার গর্ভেতে তুমি আছিলা যখন।নারদ আসিয়া দৈত্যে কহিল তখন।।শিব সহ তোমার হইবে মহারণ।অতএব আইলাম হইবে মহারণ।।অতএব, আইলাম তোমার সদন।এই গর্ভবতী যেই তোমার রমণী।।ইহাতে জন্মিবে এক মহাবীর মণি।জনকের ঘরে লয়ে রাখ এইক্ষণে।তবে সে করিবে রণ ধূর্জ্জটির সনে।।এত শুনি তব পিতা আনিয়া হেথাতে।রাখিয়া করিল যুদ্ধ শিবের সঙ্গেতে।।কপট প্রবন্ধে কহে সর্ব্ব দেবগণ।শিব হাতে তব পিতা হইল নিধন।।ভ্রাতৃবন্ধু আদি যত ছিল দৈত্যগণ।সকলেরে দেবগণ করিল নিধন।।ত্রিপুরের বংশে তুমি এক বংশধর।এত বলি তারমাতা কান্দিল বিস্তর।।এত শুনি গয়াসর সক্রোধ অন্তর।মায়ে প্রবোধিয়া গেল শুক্রের গোচর।।করযোড়ে প্রণমিল শুক্রের চরণে।নিজ পরিচয় দৈত্য দিল সেইক্ষণে।।শুনি শুক্র দৈত্যগুরু আশ্বাস করিল।অস্ত্র শস্ত্র নানা বিদ্যা সব পড়াইল।।ত্রিভুবনে যত বিদ্যা কিছু নাহি শেষ।গুরু প্রণমিয়া দৈত্য আসে নিজ দেশ।।আসিয়া মায়ের পায়ে দণ্ডবৎ কৈল।জননী বিস্তর তারে আশীর্ব্বাদ দিল।।অবশেষে যত দৈত্য ত্রিভুবনে ছিল।গয়াসুরে আসি সবে সত্বরে মিলিল।।তবে গয়াসুর বীর মহাকোপ ভরে।বহু সৈন্য সাজি গেল সুমেরু শিখরে।।ইন্দ্র আদি দেব যত অদিতি তনয়।বাহুবলে সবারে করিল পরাজয়।।তদন্তরে শিবসহ কৈল মহারণ।একে একে জিনিল সকল দেবগণ।।একচ্ছত্র দৈত্য রাজা হৈল ত্রিভুবনে।উদাসীন হয়ে ফিরে যত দেবগণে।।ইন্দ্র সহ যুক্তি করি যত দেবগণ।ক্ষীরোদ উত্তর দিকে করিল গমন।।জগৎ ঈশ্বর বিষ্ণু দিকে সনাতন।করযোড় করি সবে করিল স্তবন।।জয় জয় জনার্দ্দন জয় জগৎপতি।ত্রিভুবন চরাচর তোমার বিভূতি।।তুমি সৃজ তুমি পাল করহ সংহার।এ মহাবিপদে দেব করহ নিস্তার।।তোমার স্থাপিত দেব যত দবেগণ।আপনি স্থাপিয়া কর আপনি নিধন।।এইরূপ স্তুতিবাদ করে দবেগণ।সেইক্ষণে প্রত্যক্ষ হৈলেন নারায়ণ।।চারু চতুর্ভুজ পীতবাস পরিধান।ডাকিয়া বলেন দেবগণে ভগবান।।দৈত্যের ভয়েতে ভীত আছ দেবগণ।নির্ভর হইয়া যাহ আপন ভবন।।আজি আমি গয়াসুরে করিব সংহার।রহিবে অদ্ভূত কীর্ত্তি জগৎ মাঝার।।এত শুনি আনন্দিত যত দেবগণ।প্রণমিয়া গেল সবে যে যার ভবন।।সত্বর গেলেন প্রভু যথা গয়াসুর।সাজিল মহেশ যেন মারিতে ত্রিপুর।।নানাবিধ দিব্য অস্ত্র লইয়া প্রচুর।সংগ্রাম চাহিল গিয়া যথা গয়াসুর।।শুনি গয়াসুর ক্রোধে হইল বাহির।গোবিন্দেরে ডাকিয়া বলিল মহাবীর।।জগতের নাথ তুমি ঘোষে সুরাসুর।দেবতার বিবাদেতে মজিল ত্রিপুর।।ত্রিপুরের পুত্র আমি বিখ্যাত জগতে।সহজে বাপের বৈরী দেবতা বধিতে।।সমতায় মম সহ যুঝিবা আপনি।মম কীর্ত্তি রহে যেন যাবৎ ধরণী।।এত বলি দিব্য অস্ত্র করিল বাছনি।হাসিয়া নিলেন অস্ত্র দেব চক্রপাণি।।শেল শূল শক্তি জাঠি মুষল মুদগর।পরশু ভূষণ্ডি গদা আদি অস্ত্রবর।।নিরন্তর ফেলে দোঁহে দোঁহার উপর।এইরূপে হৈল যুদ্ধ শতেক বৎসর।।কেহ পরাজয় নহে সম দুই জনে।ভাবিয়া ডাকিয়া দৈত্য বলে নারায়ণে।।তোমার সংগ্রামে তুষ্ট হইলাম আমি।বর ইচ্ছা আছে যদি মাগি লহ তুমি।।হাসিয়া বলেন হরি শুন দৈত্যপতি।মোরে বর দিতে তুমি ইচ্ছা কৈলা যদি।।এই বর দেহ মোরে দৈত্যের ঈশ্বর।কভু হিংসা না করিবে দেব আর নর।।পাষাণ শরীর হয়ে থাকহ শুইয়া।অঙ্গীকার কৈল দৈত্য প্রাক্তন স্মরিয়া।।শুনি আনন্দিত হইলেন নারায়ণ।মোরে বর দিলা তুমি দৈত্যের নন্দন।।মোক্ষ বর মাগিয়া লইবা মম স্থানে।তব কীর্ত্তি রহে যেন এ তিন ভুবনে।।এত শুনি হৃদয়ে ভাবিয়া দৈত্যবর।প্রণমিয়া গোবিন্দেরে করিল উত্তর।।যদি কৃপা আমারে করিলা চক্রপাণি।ভক্তজন বাক্য তুমি পালিবা আপনি।।পূর্ব্বেতে নারাদ যে দিলেন উপদেশ।সেই আজ্ঞা মোরে করিবেন হৃষীকেশ।।এই ক্ষেত্র মধ্যে মম যাউক পরাণী।শিলারূপ হয়ে থাকি তব আজ্ঞা মানি।।আমার মস্তকে পদ দেহ নারায়ণ।মম নামে ক্ষেত্র এই হউক সৃজন।।গয়াক্ষেত্র বলি নাম হউক ইহার।সুখে ত্রিভুবন লোক করুক বিহার।।ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় আদি জগতের জন।আমার উপরে যেবা করিবে তর্পন।।পিতৃলোকে পিণ্ডদান করিবে যে জন।সর্ব্বপাপে মুক্ত হয়ে তারে পিতৃগণ।।চিরকাল বৈসে যেন অমর নগর।এই বর আজ্ঞা মোরে দেহ দামোদর।।পিণ্ডদান মুক্ত যেই দিন না হইব।সেই দিন উঠি আমি সংসার নাশিব।।ভাবিয়া চিন্তিয়া বর দিয়া নারায়ণ।দৈত্যের মস্তকে পদ করেন স্থাপন।।অসুর শরীর হত হৈল সেইক্ষণ।আনন্দেতে নিজস্থানে যান নারায়ণ।।শিলারূপ হয়ে দৈত্য আছে চিরকাল।অতঃপর যে কহি সে শুন মহীপাল।।মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।কাশী কহে অবহেলে ভবসিন্ধু তরি।।২৫.পঞ্চ প্রেতোপাখ্যানভীষ্ম বলিলেন শুন ধর্ম্মের নন্দন।গয়াক্ষেত্র ভ্রমিল কৌণ্ডিন্য তপোধন।।আর যত ক্ষেত্র তীর্থ পৃথিবীতে ছিল।একে একে তাহা মুনি সকলি ভ্রমিল।।কুরুক্ষেত্র উত্তরে আইল তপোধন।লক্ষ লক্ষ শব তথা হতেছে দাহন।।শ্মশানের নিকটে আইল তপোধন।দেখিলা বসিয়া আছে প্রেত পঞ্চজন।।বিকৃতি আকার সব বিকৃতি বদন।লম্ব ওষ্ঠ লম্ব কেশ লম্বিত দশন।।স্থূল নাশা কুপবর সদৃশ নয়ন।বিষ্ঠা মুত্র আদি যত অঙ্গেতে ভূষণ।।দেখিয়া বিস্ময় চিত্ত হৈল তপোধন।জিজ্ঞাসিল কে তোমরা হও পঞ্চজন।।এতেক শুনিয়া তবে মুনির বচন।কহিতে লাগিল তারা হয়ে হৃষ্টমন।।প্রেতকূলে জন্ম মোর অদৃষ্ট কারণ।তার কথা কহি মুনি শুন দিয়া মন।।নিজ কর্ম্মদোষে মোরা হইনু এরূপ।তুমি কেবা মহাশয় কহিবে স্বরূপ।।রবি চন্দ্র জিনি কান্তি দেহের বরণ।শিরেতে পিঙ্গল জটা মহা সুলক্ষণ।।মোহন মুরতি তনু জিনি নবঘন।মুখরুচি পূর্ণশশী জিনিয়া শোভন।।করিকর ভুজবর পঙ্কজ নয়ন।মধ্যদেশ মৃগ জিনি অতি সুগঠন।।কণ্ঠ কম্বু জিনি জম্ভু রক্ত পঞ্চ স্থল।রক্ত কোকনদ পদ অতি সুশীতল।।দ্বিজ বলে হই আমি ব্রাহ্মণ নন্দন।কৌণ্ডিন্য আমার নাম বিখ্যাত ভুবন।।তীর্থযাত্রা করি আমি ভ্রমি এ সংসার।গয়া গঙ্গা আদি তীর্থ ভ্রমিনু অপার।।জগতের হিত চিন্তি জগত নিস্তার।কহ সত্য পঞ্চজন কাহার কুমার।।কোথায় নিবাস কিবা নাম সবাকার।কে হেতু দেখি যে মূর্ত্তি বিকৃতি আকার।।এত শুনি পঞ্চ প্রেত বলয়ে বচন।অরণ্যে নিবাস করি শুন তপোধন।।সূচীমুখ নাম মোর কর অবগতি।শীঘ্রক ইহার নাম শুন মহামতি।।পর্য্যুষিত খ্যাত নাম ধরে এইজন।লেখক পাঠক নাম ধরে দুইজন।।এই পঞ্চজন মোরা অরণ্যেতে বসি।এত শুনি পুনরপি জিজ্ঞাসিল ঋষি।।এমত কুৎসিত নাম হৈল কি কারণ।কোথায় আছিলা কিবা করহ ভক্ষণ।।সত্য করি কহ ভাষা না ভাণ্ডিহ মোরে।এত শুনি একে একে কহিল তাঁহারে।।সূচীমুখ বলে মুনি কর অবধান।আমার পাপের কথা না হয় বাখান।।পূর্ব্বেতে ছিলাম আমি বৈশ্যের নন্দন।মহাধনবান ছিনু শাস্ত্রে বিচক্ষণ।।একদিন অতিথি আইল মম ঘরে।সম্ভাষ তাহারে না করিনু অহঙ্কারে।।দিব্য অন্ন উপহারে ভার্য্যা, পুত্র লৈয়া।করিলাম ভক্ষণ অতিথিরে না দিয়া।।ক্ষুধায় তৃষ্ণায় সেই আকুল হইল।মম অদৃষ্টের বশে উঠিয়া সে গেল।।এই হেতু সূচীমুখ নাম যে আমার।প্রেতযোনি হইলাম বিখ্যাত সংসার।।তদন্তরে শীঘ্রক করিল নিবেদন।আমার পাপের কথা শুন তপোধন।।পূর্ব্বজন্মে ব্যাধকুলে উৎপত্তি আমার।হীন শূদ্রজাতি ছিনু বড় দুরাচার।।পরদ্রব্য পরধন করি অপহার।চুরি হিংসা করিয়া পুষিনু সুতদার।।এইরূপে কত দিন কৈনু নির্ব্বাহন।অতিথি আইল দৈবে আমার সদন।।ক্ষুধাতুর হয়ে অন্ন মাগিল আমারে।ক্রোধে বহু তিরস্কার করিলাম তারে।।পাপিষ্ট অধম তুই বড় দুরাচার।ভিক্ষা মাগি খাও তুমি এ কোন্ আচার।।নিজ পরাক্রমে ধন করিয়া অর্জ্জন।উদর পুরিতে নার জীয় অকারণ।।এত বলি জ্যেষ্ঠ পুত্রে কহিনু ক্রোধেতে।ধাক্কা মারি দেহ দুষ্টে মোর বাড়ী হতে।।এত শুনি অতিথি হইল ক্রুদ্ধমন।নাহি দিয়া দুষ্ট মোরে করহ তাড়ন।।মোরে অপমান যেন কৈলি দুরাচার।প্রেতযোনি জন্ম দুষ্ট হইবে তোমার।।ক্ষুধার্ত্ত অতিথি জনে করিলি বঞ্চন।বিষ্ঠা মূত্রে হইবেক তোমার মরণ।।এত বলি দুঃখচিত্তে করিল গমন।শীঘ্রক আমার নাম হৈল সে কারণ।।তদন্তরে আর প্রেত কহিল বচন।পূর্ব্বজন্মে ছিনু আমি দ্বিজের নন্দন।।অযাজ্য যাজক ছিনু লুব্ধ অতিশয়।ধর্ম্মাধর্ম্ম করিয়া অর্জ্জিনু ধনচয়।।সুত দারা পরিবার করিয়া পোষণ।ক্রূরমতি ছিনু অতি আশয় কৃপণ।।একদিন বসি শাস্ত্র করিতে লিখন।হেনকালে আসে এক অতিথি ব্রাহ্মণ।।ক্ষুধাতুর আসি অন্ন মাগিল আমারে।ক্রোধে বহু তিরস্কার করিনু তাহারে।।সেই পাপে লেখক হইল মম নাম।শয়ন আসন মম অমঙ্গল ধাম।।তদন্তরে অন্য প্রেত বলয়ে বচন।কহিব আমার কথা শুন তপোধন।।পূর্ব্বজন্মে ছিনু আমি বৈশ্যের নন্দন।মম ঘরে অতিথি আইল একজন।।ক্ষুধার্ত্ত হইয়া অন্ন মাগিলা আমারে।কপট করিয়া আমি পুছিনু তাহারে।।তিরস্কার করি অন্ন করি পুর্য্যষিত।অল্প অন্ন দিনু নহে উদর পূরিত।।সেই পাপে পর্য্যুষিত নাম যে থুইল।অদৃষ্টের ফলে মম প্রেতত্ব হইল।।অন্য প্রেত বলে দ্বিজ শুনহ বচন।অল্প দোষে হৈল মম দুর্গতি লক্ষণ।সঙ্গদোষে অল্প পাপে পাপ বাড়ে নীতি।মোসবার বিবরণ শুন মহামতি।।বিষ্ঠা মূত্র ম্লেচ্ছোদক করি যে ভক্ষণ।শ্মশানে মশানে নিত্য করি যে শয়্ন।।বিশেষে নিবাস মম শুন তপোধন।সন্ধ্যা বীজমন্ত্রহীন যেইত ব্রাহ্মণ।।তাহার শরীরে করি নিয়ত বিহার।আর যাহা করি তাহা শুন সারোদ্ধার।।সন্ধ্যাহীন যেই গৃহে তৈলের বিহনে।বিহীন যাহার বাড়ী তুলসী কাননে।।যে যুবতী নিজপতি করি পরিহার।অনু পুরুষের সঙ্গে করে অনাচার।।বাসি বস্ত্র প্রক্ষালন আলস্যে না করে।বাসি ঘরে শোয় আর থাকে অনাচারে।।তাহার শরীরে মোরা থাকি অনুক্ষণ।পূর্ব্বজন্ম কথা কহি শুন দিয়া মন।।শূদ্রের কুলেতে জন্ম আছিল আমার।একদিন কর্ম্ম আমি কৈনু দুরাচার।।আলস্য করিয়া গৃহে করিনু শয়ন।হেনকালে অতিথি আইল একজন।।ক্ষুধায় আকুল হৈয়া ডাকিল আমারে।জাগিয়া উত্তর আমি না দিনু তাহারে।।উত্তর না পেয়ে শাপ দিল অতিশয়।জন্মান্তরে প্রেত দেহ হইবি নিশ্চয়।।এত বলি অন্য স্থানে করিল গমন।পাঠক আমার নাম হৈল সে কারণ।।এত শুনি হৈল মুনি সবিস্ময় মন।পুনরপি জিজ্ঞাসিল কহ প্রেতগণ।।কোন্ কর্ম্মে খণ্ডে হেন দুর্গতি লক্ষণ।প্রেতগণ বলে শুন কহি তপোধন।।নরযোনি পৃথিবীতে জন্মিয়া যে জন।জাতি মত কর্ম্ম যে করয়ে আচরণ।।জাতি জ্ঞাতি বন্ধুগণে করি আবাহন।মিষ্ট অন্ন পান দিয়া করায় ভোজন।।দরিদ্রে ভিক্ষুকে যেই করে অন্ন দান।তাহার পুন্যের কথা না হয় বাখান।।ব্রত উপবাস করে গোবিন্দ উদ্দেশে।অনন্ত গোবিন্দ ব্রত আচরে বিশেষে।।আলস্য শয়ন নিদ্রা করিয়া বর্জ্জন।স্বহস্তে করয়ে হরি মন্দির মার্জ্জন।।গোবিন্দের উদ্দেশে করয়ে পুষ্পোদ্যান।গোবিন্দের নাম যেই করে মতিমান।।গৃহ-ধর্ম্মচর্য্যা যেই জন পরিহরি।একেশ্বর ভ্রমে তীর্থ পর্য্যটন করি।।সর্ব্বভূতে সমভাব করে যেই জন।শত্রুতে মিত্রেতে যার সম আচরণ।।মৃত্তিকাদি দিয়া গৃহ করিয়া নির্ম্মাণ।লিঙ্গরূপে যে জন স্থাপয়ে ভগবান।।এই সব নর প্রেতযোনি নাহি পায়।সংসারেতে জন্মি যে দুষ্কর্ম্ম আচরয়।।পিতৃ মাতৃ নিন্দে যেবা নিন্দয়ে ব্রাহ্মণ।অতিথিরে যেই জন না করে তোষণ।।পিতৃযজ্ঞে দেবযজ্ঞে বিমুখ যে জন।এই সব লোক মুনি হয় প্রেতগণ।।বহু ছল করি যেই পরবৃত্তি হরে।ব্রাহ্মণেরে প্রণাম না করে অহঙ্কারে।।ব্রহ যজ্ঞে উপহাস করে যেই জন।বলে ছলে পরধন যে করে হরণ।।দেবতা উদ্দেশে দ্রব্য আনিয়া যে জন।লোভার্ত্ত হইয়া করে আপনি ভক্ষণ।।হেলায় না করে যেই তার্থ পর্য্যটন।এ সব পাতকী হয় প্রেতত্ব কারণ।।গুরুনিন্দা করে যেই বেশ্যাপরায়ণ।প্রেতযোনি জন্ম হয় সেই সব জন।।ভীষ্ম বলিলেন শুন ধর্ম্মের নন্দন।ধর্ম্ম কর্ম্ম প্রসঙ্গেতে প্রেত পঞ্চজন।।পূর্ব্বার্জ্জিত পাপ যত ভস্ম হয়ে গেল।প্রেতমূর্ত্তি ত্যজি পরে দিব্যমূর্ত্তি হৈল।।স্বর্গ হৈতে পঞ্চ রথ আইল সেক্ষণ।মুনিরে প্রণমি কৈল রথ আরোহণ।।ইন্দ্রেরে নগরে শীঘ্র করিল গমন।দেখিয়া বিস্ময় চিত্ত হৈল তপোধন।।পৃথিবীর যত তীর্থ করিল ভ্রমণ।ত্রিভুবনে বিখ্যাত কৌণ্ডিন্য তপোধন।।মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।আমার কি শক্তি ইহা বর্ণিবারে পারি।।শিরেতে বন্দিয়া ব্রাহ্মণের পদরজ।কহে কাশীদাস গদাধর দাসাগ্রজ।।
Subscribe to:
Posts (Atom)
ConversionConversion EmoticonEmoticon